সুলতান’স ডাইন: একজন চান টাকা, মিথ্যা পোস্ট দেন আরেকজন

ভোজনরসিকদের কাছে সুপরিচিত রেস্তোরাঁ সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টটি ছিল মিথ্যা। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার পর বিষয়টি মীমাংসার নামে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। সেই টাকা না পেয়েই অপপ্রচার চালান একটি বেসরকারি ব্যাংকের সাবেক দুই কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে আবদুল হাকিম চান টাকা, আর কনক রহমান ওরফে কনক লায়লা মিথ্যা পোস্ট দেন ফেসবুকে। আলোচিত এ ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে এসব তথ্য। শিগগিরই এটি আদালতে জমা দেওয়া হবে।

বিরিয়ানির মাংস নিয়ে বিতর্কের ঘটনায় অপপ্রচার ও মানহানির অভিযোগে একটি মামলা করে সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার সমকালকে বলেন, তদন্তে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য ফেসবুকে পোস্ট করার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

গত ২ মার্চ কনক লায়লা সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখা থেকে সাত প্যাকেট বিরিয়ানি কেনেন। খাবার নিয়ে মহাখালীতে নিজের কার্যালয়ে যাওয়ার পর ফোন করে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজারকে ডাকেন তিনি। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিরিয়ানিতে ব্যবহৃত মাংস খাসির নয়। এ বিষয়ে তিনি ৫ মার্চ ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেই পোস্ট খুব দ্রুত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

পিবিআই সূত্র জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্ত দু’জন ছাড়াও একই সঙ্গে ওই খাবার খেয়েছেন এমন পাঁচজনকে চিহ্নিত করে পিবিআই। তারা হলেন– নাজমুল হক, বাবলু সরকার, মাহবুব আলম, জামাল হোসেন ও আজাদ হোসেন। তারা জবানবন্দিতে জানান, খাবারের বিষয়ে তাদের কোনো অভিযোগ ছিল না এবং ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তা সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা করেছেন। এক পর্যায়ে আবদুল হাকিম তাদের কাছে টাকা দাবি করেন। এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পিবিআইকে জানায়, বিরিয়ানিতে খাসির বদলে অন্য কোনো প্রাণীর মাংস দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।

 

Photo: TBS

Photo: TBS
 
 

পিবিআইর এসআইঅ্যান্ডও (সংঘবদ্ধ অপরাধ-দক্ষিণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারওয়ার জাহান বলেন, অভিযোগ, সাক্ষ্য ও দালিলিক প্রমাণ পর্যালোচনায় অনৈতিকভাবে টাকা দাবি এবং অপপ্রচার চালানোর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ ক্ষেত্রে একজন আগে টাকা চেয়েছেন, আরেকজন পরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

ওই ঘটনার পর কনক লায়লা ও আবদুল হাকিমকে সাময়িক বরখাস্ত করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে আবদুল হাকিম সমকালকে বলেন, আমি কোথাও বিরিয়ানিতে অন্য মাংস দেওয়ার কথা বলে অভিযোগ করিনি। টাকা চাওয়ার কথাও সত্য নয়। শুধু সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। একই বিষয়ে জানতে কনক লায়লার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

পিবিআইর এসআইঅ্যান্ডও (সংঘবদ্ধ অপরাধ-দক্ষিণ) জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সাগর সরকার বলেন, মামলার বাদী ও তাঁর সঙ্গীকে আটকে রাখার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত দু’জন ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনের সম্পৃক্ততার কথা বলা হলেও তার প্রমাণ মেলেনি। এ ছাড়া বাদী ৫ কোটি টাকার ক্ষতির দাবি করলেও সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিতে না পারায় এর সঠিকতা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজিম উদ্দিন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখেছেন।

সুলতান’স ডাইনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম বলেন, ভুয়া অভিযোগ তুলে আমাদের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্টদের সম্মানহানি করা হয়েছে। এ কারণে আমরা মামলা করেছিলাম। এ ঘটনায় সাইবার ট্রাইব্যুনালেও একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

আরও জানতে ভিজিট করুণ সমকাল অনলাইন নিউজ পোর্টালে অথবা এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *